বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ রাকিবুল হাসানঃ— ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালে সকাল ৮.৪৫ ঘটিকায় সময়ে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে ৯ তলা বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে । ভবনের কয়েকটি তলা মাটির নিচে দেবে যায় । ভবনের কিছু অংশ পাশ্ববর্তী ভবনের উপর পড়ে । এই ভয়াবহ দূর্ঘটনায় ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয় এবং প্রায় ৩ হাজারের মতো শ্রমিক আহত হয়। এমন শিল্প দুর্ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তর দূর্ঘটনা বলে বিবেচিত হয়েছে । রেশমা নামের একটি মেয়েকে দূর্ঘটনার ১৭ দিন পর ১১ মে তারিখে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ।
আরও পড়ুনঃ দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাঁশখালী বাসির স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে বাঁশখালী মাতৃসদন ও জেনারেল হাসপাতাল
আজ ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার দূর্ঘটনার সাত বছর পূর্ণ হল । এই ভয়াবহ দূর্ঘটনার আহত বহু শ্রমিক ও তাদের পরিবার পরিজন মানবেতর ভাবে জীবন যাবন করছে । সাভারে রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের জীবনে এখনও হাসি ফোটেনি । নিশ্চিত মৃত্যুর কবল হতে ফিরে আসা শ্রমিকদের মনের ভয় ও শঙ্কার আজও কেটে উঠেনি । দূঘটনার ৭ বছরের কোন মুহুর্তের জন্য তারা ভালভাবে সময় কাটাতে পারেনি । কেমন যেন দুঃস্বপ্ন তাদের রাতের ঘুম হতে জাগরত করে ফেলে । আহত শ্রমিকেরা ভয়াবহ দুঃচিন্তার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে । সেই স্মৃতি আজও তারা একটু সময়ের জন্য হলেও ভুলতে পারেনি।
২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সাভার-আশুলিয়ায় রানা প্লাজার ৭ বছর পূর্তিতে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন ও স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম উপস্থিতিতে ও প্রশাসনের সমন্বয়ে দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে এবারে রানা প্লাজার দূর্ঘটনার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সকল ধরনের কর্মসূচী স্থগিত ঘোষনা করেছেন । করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ হতে তাদের সকল কর্মসূচী স্থগিত করেন । কোন শ্রমিক বা কেউ যেন রানা প্লাজার সামনে গিয়ে জড়ো না হন তার জন্য শ্রমিক নেতারা সবাইকে আহবান জানান ।
আরও পড়ুনঃ নলডাঙ্গা পৌরসভায় কর্মহীন ও হতদরিদ্রদের ৪৫০ পরিবারে এমপি শিমুলের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
আশুলিয়ার স্বনির্ভর ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন যে, কনোরা ভাইরাস এর ভয়াবহতার এমন সময়ে কোন কর্মসূচী পালন করলে এ অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবেনা । যার ফলে (কোভিড-১৯) রোগটি এলাকাতে ছড়িয়ে গিয়ে মহামারী আকার ধারণ করতে পারে । দেশের এমন দূঃসময়ে ২৫টি শ্রমিক সংগঠন যাতে করে কোন মানুষ করোনায় আক্রান্ত না হয় তার জন্য সকল কর্মসূচী বাতিল ঘোষনা করায় চেয়ারম্যান মহোদয় সকল শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান । চেয়ারম্যান মহোদয় রানা প্লাজা ও তাজরীন গামের্ন্টস এ দূর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিক ও তাদের পরিবার পরিজনদের জন্য খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিকট হস্তান্তর করেন।
সাভার-আশলিয়ার গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে এর সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন যে, সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় দেশ, জাতি ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে রানা প্লাজার দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকল ধরণের কর্মসূচী বাতিল ঘোষনা করছি । যাতে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে । খায়রুল মামুন মিন্ট আরও বলেন আমরা সবাই যে যেখানে অবস্থান করছি সেখান হতেই রানা প্লাজায় দূর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্বরণ করবো। সেই সাথে তিনি আহত ও নিহতদের পরিবারে প্রতি সমাবেদনা জানান ও সরকারি ভাবে যেন হতাহতদের সকল প্রকার আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করা হয় এই জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ ভাবে আহবান জানান । শ্রমিক নেতা খায়রুল মামুন মিন্টু সকল শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ হতে অসহায় শ্রমিকদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্বনির্ভর ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মহোদয় কে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানান ।
আরও পড়ুনঃ মনসুর নগর ইউনিয়নে ত্রাণ পেল ৫৫০ পরিবার
রানা প্লাজায় হতাহত মোঃ নাছির উদ্দিন দূর্ঘটনার কথা বলতে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন প্রতিদিনের মতো আমরা সবাই কাজে যোগদান করি কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহুতের মধ্যে ভবনটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে মাটির সাথে মিশে যায় । দুঃসহ সেদিনের সেই স্মৃতি মনে করে আজও তিনি অসহায়ের মতো কোন রকমের বেঁচে আছেন । তিনি বলেন আমরা যারা দূর্ঘটনা হতে কোন রকম ভাবে বেঁচে আছি আমাদের যেন সরকারি ভাবে পুনর্বাসন সহ সকল প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয় এজন্য সরকার এর নিকট জোর দাবি জানান।
আরও পড়ুনঃ জয়পুরহাট মিতালী যুব সংঘ এর উদ্যগে আাটা ও সবজি বিতরণ
মৃত্যুর দারপ্রান্ত হতে বেঁচে যাওয়ার অনেকই পুঙ্গ হয়ে আছে, আবার অনেকে চিকিৎসায় কিছুটা হলেও সুস্থ হয়েছেন । তেমন কেউ সম্পন্ন ভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি । তবে এর মধ্য যে সমস্ত শ্রমিকরা কিছুটা হলেও সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েছ তারা তেমন ভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারছে না । আহত ও অসহায় পরিবার এর সহযোগিতায় সরকার সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন শ্রমিক নেতারা সহ অনেকেই মনে করেন । রানা প্লাজার সামনে এসে এখনও নিহত বা আহতদের খোঁজে তাদের স্বজনদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । নিথর দৃষ্টিতে আপন জনদের খোঁজে তাকিয়ে থাকে রানা প্লাজার বর্তমান খালি জায়গাতে যেখানে তাদের অনেকের স্মৃতি মিশে আছে এই স্থানে।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply